ফুসফুসের রোগ নির্ণয় এবং উন্নত চিকিৎসা

ফুসফুস মানব শরীরের অন্যতম প্রধান একটি অংশ। ফুসফুসের নানা বিষয়ে আমাদের মনে হামেশাই বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। অনেকেই অসচেতনতা বা জ্ঞানের অভাবে ফুসফুসের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না। ফুসফুসের রোগকে শ্বাসনালী, ফুসফুসের প্যারেনকাইমাল এবং প্লুরাল রোগে ভাগ করা যায়। শ্বাসনালীর রোগের মধ্যে প্রধানত হাঁপানি, সিওপিডি, শ্বাসনালীর টিউমার সহ অন্যান্য এন্ডোব্রোনকিয়াল সংক্রমণ অন্তর্ভুক্ত। প্যারেনকাইমাল রোগ যেমন; ফুসফুসের ইন্টারস্টিশিয়াল রোগ, ক্যান্সার, সংক্রমণজনক রোগ (ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস, যক্ষ্মা) ইত্যাদি, প্লুরাল রোগ যেমন; ইফিউশন, নিউমোথোরাসেস, হেমোথোরাক্স ইত্যাদি রোগও ফুসফুসের রোগ হিসেবে পরিচিত। শ্বাসকষ্ট, কফ-সর্দি সহ কাশি, হাঁচি, বুকে ব্যথা ইত্যাদি ফুসফুস জনিত রোগের প্রধান উপসর্গ। কারও মধ্যে এসব উপসর্গ দেখা গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে। তবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে অবশ্যই পালমোনোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। উপসর্গগুলো ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে যথাযথ পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

ফুসফুসের ক্যান্সার

ফুসফুসের ক্যান্সার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব কিনা সেই চিন্তা অনেকেই। ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য অস্ত্রোপচার বা সার্জারি অবশ্যই সম্ভব এবং ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে অবশ্যই নিরাময়যোগ্য। ধূমপায়ীদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই তাদের ক্যান্সারের অবস্থা নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা যথাযথ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। আবার কখনও কখনও এন্ডোব্রোনকিয়াল বা ট্র্যাচিয়াল টিউমার ডেবলকিংয়ের মতো উপসর্গগুলো নিরাময়ের জন্যও অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে।

ফুসফুসে ফরেইন বডি

ফরেইন বডি এবং ফুসফুস থেকে এটি অপসারণ নিয়ে সহজভাবে বলতে গেলে ফরেইন বডি (এফবি) হলো এমন কোন জিনিস যা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শরীরে প্রবেশ করে জটিলতা সৃষ্টি করে। ফুসফুসের ক্ষেত্রে ট্র্যাচিওব্রনকিয়াল ফরেইন বডি অ্যাস্পিরেশন (এফবিএ) একটি ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতা যার ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কারণ এটি শ্বাসনালীতে আক্রমণ করে রোগীর অক্সিজেন চলাচল আটকে দেয় ফলে রোগী নিশ্বাস নিতে পারে না।

শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন খাদ্যবীজ জাতীয় খাবার যেমন; বাদাম, বুট, ফলের বিচি, পপকর্ন ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে (সাধারণত গিলে ফেলার কারণে) যেকোন দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। শক্ত কোন বস্তু বা খেলনার কোন ক্ষুদ্র অংশও এই তালিকার বাইরে নয়। একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে পয়সা, বোতাম, মার্বেল ইত্যাদি গিলে ফেলার ঘটনাও ঘটে। এগুলো শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে শ্বাসচলাচল বন্ধ করে দিতে পারে যার ফলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।    

তবে মধ্যবয়স্ক বা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো ভিন্ন। পেরেক, পিন, দাঁতের কোন অংশ বা সম্পূর্ণ দাঁত গিলে ফেলা, সেফটি পিন বা হিজাবের পিন গিলে ফেলা (মেয়েদের ক্ষেত্রে) ইত্যাদি বিষয় গুলো ফরেইন বডি হিসেবে ফুসফুসে জটিলতা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, খাবার থেকেও এমনটা ঘটতে পারে। যেমন; খাবার ভালোভাবে না চিবিয়ে আস্ত গিলে ফেলা, মাংসের হাড়, মাছের কাঁটা, ফলের বিচি, চুইংগাম ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গিলে ফেলার কারণেও বিপত্তি ঘটতে পারে।

এমতাবস্থায় সময় নষ্ট না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ। সাধারণত ট্র্যাচিওস্টমি টিউব ডিভাইস ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা পদার্থ পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। তবে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা শ্রেয়।

 

হাইপক্সিয়া

হাইপক্সিয়া সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা কম। হাইপোক্সিয়া খুবই পরিচিত একটি জটিলতা। হাইপোক্সিয়া আক্রান্ত রোগীদের শরীর বা শরীরের কোন একটি অংশে অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যেতে পারে। ত্বকের রং পরিবর্তন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, কাশি, হৃদ-কম্পন দ্রুত হয়ে যাওয়া, জোরে জোরে নিশ্বাস নেওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হাইপোক্সিয়া’র সাধারণ কিছু উপসর্গ। এসব উপসর্গ দেখা গেলে রোগীর জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অ্যাজমা বা হাঁপানি

অ্যাজমা বা হাঁপানি অতি সাধারণ একটি রোগ। অনেকেই মনে করেন এটি দুরারোগ্য একটি রোগ এবং সম্পূর্ণভাবে এর নিরাময় সম্ভব নয়। হাঁপানি অবশ্যই একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্যও বটে। কারো শ্বাসকষ্ট আছে মানেই যে তার অ্যাজমা আছে, তা কিন্তু নয়। অ্যাজমা নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। অ্যাজমা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন ও ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তবে অনিয়ন্ত্রিত অ্যাজমার জন্য কিছু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিও রয়েছে। যেমন; ওমালিজুমাব, মেপোলিজুমাব, বেনরালিজুমাব ইত্যাদি। এছাড়া আমরা ব্রোনকিয়াল থার্মোপ্লাস্টি নামক একটি ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতির ব্যবহার করি। যা মূলত গুরুতর রোগীদের জন্য একটি এন্ডোব্রোনকিয়াল চিকিৎসা। অ্যাজমার ফলে ফুসফুসের পেশীগুলো সংকুচিত হয়ে যায় তাই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ফুসফুসের পেশীগুলোতে মৃদু তাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে করে শ্বাসচলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হয়।

যারা ইতোমধ্যেই ফুসফুস জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় কম বা বেশি নয়। এমন কোনো তথ্য জানা যায়নি, যাতে করে এই বিষয়ে সঠিক মন্তব্য করা সম্ভব। করোনা এমন একটি ভাইরাস যা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে যে কারোই হতে পারে। আমরা এমন অনেক রোগীই পেয়েছি যারা একইসাথে ফুসফুস জনিত সমস্যা এবং করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে এদের এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় কোন পার্থক্য নেই।

Yashoda Hopsitals

Recent Posts

ఎండోక్రైన్ రుగ్మతలు: కారణాలు, నిర్దారణ, లక్షణాలు, చికిత్స, పూర్తి వివరాలు

మానవ శరీరంలో హార్మోన్లు చాలా ముఖ్యమైన పాత్ర పోషిస్తాయి. రోజువారీ జీవితంలో శరీరానికి అవసరమైన చర్యలు అంటే ఆకలి, నిద్ర,…

1 hour ago

రక్తనాళ శస్త్రచికిత్సలో రూపాంతరాలు: నూతన విధానాలు, పరిధి యొక్క విస్తరణ & ప్రయోజనాలు

ఒకప్పుడు ప్రధాన రక్తనాళాల సంబంధిత సమస్యలకు బహిరంగ శస్త్రచికిత్స అనేది తరుచుగా సూచించబడేది, కానీ నేడు ఈ సమస్యలను సులువుగా…

2 days ago

టైఫాయిడ్ జ్వరం లక్షణాలు, నిర్దారణ, ఆహార నియమాలు, చికిత్స

టైఫాయిడ్ అంటే సాల్మొనెల్లా టైఫీ అనే బాక్టీరియా వలన కలిగే వ్యాధి, ఈ వ్యాధి సాధారణంగా రెండు నుండి మూడు…

2 days ago

Tonsillar Health: A Detailed Exploration of Tonsillitis, Tonsil Stones, and Related Conditions

Dystonia is a neurological movement disorder that often remains unexplained, leaving patients and their families…

2 days ago

ఫైబ్రోమైయాల్జియా (కండరాల నొప్పుల రుగ్మత): లక్షణాలు, కారణాలు, మరియు చికిత్స గురించి సమగ్ర వివరణ

ఫైబ్రోమైయాల్జియా అనేది ఒక దీర్ఘకాలిక వ్యాధి. ఇది శరీరమంతా నొప్పి, అలసట, నిద్ర సమస్యలు, మానసిక సమస్యలు మరియు అనేక…

6 days ago

Dystonia: Know the Symptoms, Causes, and Treatment Strategies for this Involuntary Muscle Contraction

Dystonia is a neurological movement disorder that often remains unexplained, leaving patients and their families…

1 week ago